Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

মাছের খাদ্য

কৃষিবিদ ফরহাদ আহাম্মেদ

মাছ চাষিরা মাছের খাদ্য সম্পর্কে প্রায়ই জানতে চান । মাছ দ্রুত বড় করার চেষ্টা করেন। মাছের দৈহিক দ্রুত বৃদ্ধি ও সুস্থ রাখার জন্য সঠিক পরিমাণে, সময়মতো ও সঠিক পদ্ধতিতে খাদ্য দেয়া প্রয়োজন । এতে মাছ উৎপাদন  খরচ কম হয় বলে লাভবান হওয়া যায়। মাছ প্রাকৃতিক ও সম্পূরক খাদ্য খায়। এ ছাড়াও নালা-নর্দমার পচা পানির উচ্ছিষ্টাংশ ভক্ষণ করে। তবে এরা উদ্ভিদ কণা ও প্রাণিকণা  খেতে পছন্দ করে। এগুলো খালি চোখে স্পষ্ট দেখা যায় না। অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে দেখা যায়।


মাছের খাদ্য  প্রধানত দুই রকম- ক. প্রাকৃতিক খাদ্য খ. সম্পূরক খাদ্য।
ক. প্রাকৃতিক খাদ্য (
Plankton)  


সূর্যালোকের সাহায্যে জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে মাছের যে খাদ্য (উদ্ভিদ কণা ও প্রাণিকণা) তৈরি হয়, তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বা প্লাঙ্কটন বলে। ইহা দুই রকম
১. উদ্ভিদ কণা (
Phytoplankton) : জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সবুজ কণা তৈরি হয়, যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন- শেওলা, ফেকাস, নষ্টক, ডায়াটম, ভলবক্স, এনাবিনা ইত্যাদি।

২. প্রাণিকণা (Zooplankton) : জলাশয়ের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রাণী কণা তৈরি হয় যা মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হয়। যেমন-ময়না, ড্যাফনিয়া, বসমিনা, কেরাটেলা, ফিলিনিয়া, সাইক্লপস, প্রোটোজোয়া, রটিফার ইত্যাদি।


প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরির পদ্ধতি
প্রাকৃতিক খাদ্য জলাশয়ে প্রাকৃতিকভাবে জন্মে। তবে বেশি পরিমাণে জন্মানোর জন্য জৈব ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করতে হয়। পুকুর  প্রস্তুতির  সময় ও ১৫ দিন পর সার প্রয়োগ করে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি করতে হয় । পুকুর প্রস্তুতির সময় প্রতি শতাংশে ৬-৭ কেজি গোবর সার, কম্পোস্ট সার ৮-৯ কেজি, ইউরিয়া  ২০০ গ্রাম, টিএসপি  ১০০ গ্রাম, একটি পাত্রে পানির সাথে ভালোভাবে গুলে সূর্যালোকিত দিনে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হয়। মাছের পোনা পুকুরে ছাড়ার ১৫ দিন পর পর প্রতি শতাংশে গোবর সার ১ কেজি, ইউরিয়া ৪০ গ্রাম ও টিএসপি ২০ গ্রাম হারে পানিতে দিতে হয় । এতে সম্পূরক খাদ্য না দিলে বা কম দিলেও হয়।   


প্রাকৃতিক খাদ্যের গুরুত্ব
প্রাকৃতিক খাদ্য খাওয়া উৎপাদিত মাছ দ্রত বড় হয়। মাছ খেতে সুস্বাদু। মাছের সম্পূরক খাদ্য খরচ লাগে না । মাছের উৎপাদন খরচ কমে। পুকুরে গ্যাস তৈরি হয় না। পানির পরিবেশ ভালো থাকে। উদ্ভিদ কণা অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ত্যাগ করে। এতে পুকুরে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় থাকে।


পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি না হলে বা কম হলে সুষম সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। এজন্য পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা করা প্রয়োজন।


প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা  
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য বোঝার পদ্ধতি যেমন: (১) কাঁচের গ্লাসে পুকুরের স্বচ্ছ পানি নিয়ে সূর্যের আলোর দিকে ধরলে যদি গ্লাসে ৮-১০টি কণা দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। (২) হাত কুনুই পর্যন্ত পুকুরের পানিতে ডুবালে যদি হাতের তালু দেখা যায় তবে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য নাই। (৩) পুকুরের পানির রঙ হালকা সবুজ বা বাদামি দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। (৪) প্লাঙ্কটন নেটের ভেতর দিয়ে ২০ লিটার পানি ঢাললে ২ সেমি. সবুজ  কণা জমা হলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য আছে। (৫) সেক্কি ডিস্ক জলাশয়ে ৩০ সেমি. ডুবালে সাদা কালো রং দেখা গেলে বুঝতে হবে প্রাকৃতিক খাদ্য নেই। প্রাকৃতিক খাদ্য যথেষ্ট পরিমাণে থাকলেও মজুদ মাছের মোট ওজনের ২-৫% সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়।    

 

খ. সম্পূরক খাদ্য
যে খাদ্যে সকল পুষ্টি উপাদান সুনির্দিষ্ট অনুপাতে থাকে তাকে সুষম সম্পূরক খাদ্য বলে। পুকুরে উৎপাদিত প্রাকৃতিক খাদ্যের অভাব হলে মাছের দ্রুত শারীরিক বৃদ্ধির নিমিত্তে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি সম্পূরক খাবার সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। মাছ ছাড়ার পরের দিন হতে প্রতিদিন সকালে ও বিকালে মজুদকৃত মাছের মোট শরীরের ওজনের শতকরা ৫-৬ ভাগ হারে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। উল্লেখ্য, প্রতি ২০ কেজি মাছের জন্য অন্তত পক্ষে এক কেজি খাবার প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রতি ১৫ দিন বা ১ এক মাস অন্তর একবার জাল টেনে কিছু মাছ ধরে ওজনের গড় বের করে নিয়ে মোট ওজনের ওপর আনুপাতিক হারে খাবার দিতে হবে।


সরিষার খৈল ৩০% ও গমের ভুসি বা চালের কুঁড়া ৭০% অনুপাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে দুটি খাবারের মিশ্রণ পুকুরের বিভিন্ন স্থানে অথবা ৩-৪টি নির্দিষ্ট স্থানে প্রয়োগ করা যেতে পারে। উল্লেখ্য, ভাসানো খাবার হিসাবে গমের ভুসি বা কুঁড়া পানির উপরে শুকনা অবস্থায় সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন সরবরাহ করা ভালো। সহজ ব্যবস্থাপনায় অল্প খরচে শুধুমাত্র গমের ভুসি বা চালের কুঁড়া শতাংশ প্রতি ১ম মাসে ৫০ গ্রাম, ২য় মাসে ১০০ গ্রাম, ৩য় মাসে ১৮০ গ্রাম, ৪র্থ মাসে ২২০ গ্রাম, ৫ম মাসে ২৬০ গ্রাম ও ষষ্ঠ মাসে ৩০০ গ্রাম দিতে হবে।


সম্পূরক খাদ্য তৈরির নিয়ম
 ফিশমিল ১০%, চালের কুঁড়া ৫৩%, সরিষার খৈল ৩০.৫০%, ভিটামিন ও খনিজ মিশ্রণ ০.৫% ও চিটাগুড় ৬% মেপে নিতে হয়। এগুলো গুঁড়ো করে মিশাতে হবে। এরপর পানি দিয়ে মণ্ড তৈরি করে পিলেট মেশিনে দিয়ে ছোট ছোট বড়ি তৈরি করতে হবে। এগুলো শুকিয়ে মাছকে খেতে দিতে হয়। উল্লেখ্য, এগুলো উপাদান দিয়ে তৈরি ভাসমান খাদ্যও দেয়া যায়। সম্পূরক খাদ্য বাজারে কিনতে পাওয়া যায়।

 

খাদ্য প্রয়োগ পদ্ধতি
 প্রতিদিন নির্দিষ্ট স্থানে, নির্দিষ্ট সময়ে সম্পূরক খাদ্য দিতে হয়। খাদ্যগুলো পুকুরে পানির নিচে নির্দিষ্ট গভীরতায় দিতে হয়। ভাসমান খাদ্য দিলে খাদ্যের অপচয় কম হয়। সম্পূরক খাদ্য দিলে মাছের খাদ্যের অভাব নিশ্চিত দূর হয়। মাছ দ্রæত বৃদ্ধি পায়। এছাড়াও টোপাপানা, ক্ষুদিপানা, কলাপাতা, নেপিয়ার বা প্যারাজাতীয় নরম ঘাস, পাতা ইত্যাদি প্রতিদিন লবণ-পানিতে ধুয়ে সকাল-বিকাল পুকুরে খাদ্য পাত্রে দেয়া যেতে পারে। মাছের দেহে খাদ্য ও পুষ্টির অভাব বোঝার জন্য প্রতিমাসে অন্তত একবার জাল টেনে মাছের নমুনা দেখে শারীরিক বৃদ্ধি পর্যবেষক্ষণ করা উচিত।


মাছ চাষ করে লাভবান হওয়ার জন্য মাছকে পরিমাণমত, সময়মত ও পুষ্টিসমৃদ্ধ খাদ্য খাওয়াতে হবে। খাদ্যের ঘাটতি হলে মাছের দৈহিক বৃদ্ধি কমে যাবে। আবার পুকুরে অতিরিক্ত খাদ্য দিলে খাদ্য পচে গ্যাস সৃষ্টি হয়ে মাছ মারা যাবে। মাছ রোগাক্রান্ত হলে পুকুরে অক্সিজেনের অভাব হলে, গ্যাস হলে, বেশি শীতে অথবা মাছের অন্য কোন সমস্যা হলে মাছ খাদ্য খুব কম খায় অথবা খায় না। এ সময় খাদ্য প্রয়োগ কময়ে রাখতে হবে অথবা বন্ধ রাখতে হবে। মাছ কয়েক দিন না খেয়েও বাঁচতে পারে। মাছের চলাচল স্বাভাবিক হলে খাদ্য প্রয়োগ স্বাভাবিক করতে হবে।


দেশে মাছ উৎপাদনে অনেক উন্নতি হয়েছে। এর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে মাছ চাষিরা মাছকে খাদ্য খাওয়াতে সচেতন হয়েছে। বিগত প্রায় দুই দশক দেশে মাছের চাহিদার চেয়ে ঘাটতি ছিল। এখন প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ। এজন্য ‘মাছে ভাতে বাঙালি’ প্রবাদটি এখন আবার বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছে।

সহকারী অধ্যাপক, কৃষিশিক্ষা, শহীদ জিয়া মহিলা কলেজ, ভূঞাপুর, টাঙ্গাইল, মোবাইল : ০১৭১১-৯৫৪১৪৩, ই-মেইল : farhadinfo1968@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon